বৃত্ত কেন ৩৬০° ডিগ্রী?

 বৃত্ত কেন ৩৬০° ডিগ্রী?



বৃত্ত পরিচিত এক জ্যামিতি৷ ছোট বেলা থেকে এটি পড়ে আসছি৷ বড় হতে হতে এর কত ক্রস সেকশন শিখতে লাগলাম!  তবে কখনো কি মাথায় এসেছে,  এই বৃত্ত যত ভাগেই ভাগ হোক না কেন,  সম্পূর্ণ বৃত্ত কেন ৩৬০°?  

না মানে অন্য সংখ্যাও তো হতে পারত,  যেমন ধরুন আমাদের পরিচিত ও কাঙ্ক্ষিত একটি সংখ্যা ১০০৷  এটা কেন ফুল সার্কেলের মান হলো না?

ছোট বেলায় আমার এক মামার কাছে এই প্রশ্নটা করেছিলাম৷  তিনি আমাকে বলেছিলেন,  এটাই সিস্টেম!  ধরা হয়েছে৷ সে যাই হোক৷  মামার কথাও ঠিক৷  ধরা তো হয়েছেই৷ কিন্তু কেনই বা ৩৬০ ই ধরা লাগবে?  অন্য কিছুও তো ধরতে পারত নাকি? 

তো আজকে লিখব সম্পূর্ণ বৃত্ত কেন ৩৬০° (ডিগ্রী) সেটা নিয়ে৷ 

এর অনেক গুলো কারণ আছে৷  অনেকে পৃথিবীর চারপাশে সূর্যের ঘূর্ণন সময়ের উপর নির্ভরতাকে দায়ী করে৷  কিন্তু এর চেয়েও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে।

এর মধ্যে গানিতিক,  ঐতিহাসিক কারণ যেমন আছে ঠিক তেমনি ধর্মীয় কারণও আছে কিছুটা৷ 



গানিতিক কারণঃ

 ৩৬০ সংখ্যাটা একটা সুন্দর সংখ্যা৷ কারণ এটি ১-১০ পর্যন্ত শুধু ৭ ব্যাতিত অপর সকল সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য৷  আবার ৩৬০ এর বিভাজ্য সংখ্যা ২৪ টা৷ যা এরকম সংখ্যার তুলনায় একটু বেশি! যার ফলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করার মতো৷ 

যেমন ধরুন ৩৬০ কে ৩ দ্বারা ভাগ করলে ১২০ পেলাম৷ আবার ৪ দ্বারা করলে ৯০৷  এরকমভাবে এত কাছাকাছি সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে বিভাজ্য সংখ্যা কমই আছে৷  এর জায়গায় যদি ১০০ নেয়া হতো,  তাহলে ৪ দ্বারা ভাগ করে নাহয় ২৫ করে চারটি সমানভাগ মেলানো যেত৷ কিন্তু ৩ দ্বারা ভাগ করলেই তো আর সুষমভাগে ভাগ করা যেত না৷ তাই এই গননার হিসেবে হয়ত সহজ ও সূক্ষ্ম করার জন্যই ৩৬০ কে ধরা হতে পারে একটা সম্পূর্ণ বৃত্তের পরিমাপ!  কারণ ৩৬০ খুব সুন্দর করে বিভাজ্য।


বছরের দৈর্ঘ্যের সাথে মিল রেখে সম্পূর্ণ বৃত্তকে ৩৬০ ধরাঃ

পূর্বের মানুষজন প্রথম সূর্যের অবস্থান এর দিকে লক্ষ্য করে একবছর গননা করে৷  যা দরকার ছিল তাদের কৃষিসহ অনেক খাতে৷  তখন তারা অনুধাবন করেছিল যে ৩৬৫ দিনে সূর্য একবার ঘুরে আসে৷ আর এর সাথে সাথে তারা দেখত,  ঠিক একই ভাবে ঋতু ও কালগুলোও ঘুরে ঘুরে আবার একই সময় পর পর আসত৷ এভাবে পারসিয়ানরা একটি ক্যালেন্ডার তৈরী করেছিল তবে এটি ছিল ৩৬০ দিনে৷  যা ৬ বছর পর পর অতিরিক্ত ৫ দিন নিয়ে একটি অতিরিক্ত মাস তাদের ক্যালেন্ডারে যুক্ত হত৷  সেই ঘুরা,  অর্থাৎ পর্যায়বৃত্তাকার চলার সাথে হয়ত বৃত্তের ঘুরাকে বিবেচনা করেই ৩৬০ সংখ্যাটিকে বৃত্তের পরিমাপ ধরতে পারে।


বৃত্তের মাপ ৩৬০ ডিগ্রী হওয়ার পিছনে ঐতিহাসিক কারণঃ

অনেকে মনে করে বৃত্তের এই ৩৬০ পরিমাণটির পিছনে কারণ হলো ব্যাবিলিয়নদের ৬০ ভিত্তিক সংখ্যার ব্যবহার! আমরা সাধারণ দশভিত্তিক সংখ্যা বা ডেসিমাল সংখ্যা ব্যবহার করে থাকি,  কিন্তু ব্যাবিলিয়নরা সেখানে ব্যবহার করত সেক্সাজেসিমাল নম্বর!

৬ টি সমানমানের সমবাহু ত্রিভুজে একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়৷  আর ব্যাবিলিয়নরা একটি ত্রিভুজের জন্য ভিত্তি যেহেতু ৬০ বিবেচনা করত তাই ৬ টির জন্য সম্পূর্ণ একটি বৃত্তের ভিত্তি হয় সেখানে ৩৬০। এটিও কারণ হতে পারে!


হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ঋগবেদে উল্লেখিত শ্লোকও বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রী হওয়ার পিছনে কারণ হতে পারে! 

"বর্ষ চক্রে দ্বাদশ মাস আরের ন্যায় আবর্তন করে। ইহার কেন্দ্র স্থলে গ্রীষ্ম বর্ষা শীত এই তিন ঋতু রহিয়াছে।এই তত্ত্বকে কে জানে? এই চক্রে ৩৬০ দিন, কীলকের ন্যায় স্থাপিত।ইহার ব্যতিক্রম ঘটে না।"

(ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/৪৮)(অনুবাদ সংগ্রহীত)

এখানে চক্রকে ৩৬০ টি কীলক দ্বারা ভাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷  আর স্বাভাবিকভাবে প্রাচীন ভারত ছিল অনেক দার্শনিক ও গণিতবিদের দেশ!  আর সেই দার্শনিকগণ পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অনুসরণে বৃত্তের পরিমাপ ৩৬০ স্থির করতে পারেন৷  তবে তা কেবল অনুধাবন মাত্র৷  এর ঐতিহাসিক সত্যতা প্রমাণিত হয়নি! 

অবশেষে বলি বৃত্তের এই মানের পিছনে ব্যাবিলিয়নদেরকেই সবচেয়ে বেশি বিবেচনা করা হয়৷  তবে তা নির্দিষ্ট করে জানা যায় না৷  সবটাই আসলে অনুমান!


2 Comments

Previous Next

نموذج الاتصال