মাইটোসিস কোষ বিভাজন

 

মাইটোসিস কোষ বিভাজন


যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে এবং অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান হয় তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। এক্ষেত্রে অপত্য কোষের গঠন ও গুনাগুন ও মাতৃকোষের অনুরূপ হয়। 

মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ:

প্রথম পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের বিভাজন হয়। একে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস।

দ্বিতীয় পর্যায়ে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন হয়। একে বলা হয় সাইটোকাইনেসিস।

মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ক্ষেত্রে ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোকাইনেসিস শুরু হবার আগে কোষের নিউক্লিয়াসের প্রস্তুতিমূলক কাজ থাকে, কোষের এই অবস্থাকে ইন্টারফেজ বলে।

মাইটোসিস কোষ বিভাজনের পাঁচটি ধাপ বা পর্যায় রয়েছে-

  • পর্যায় – ১ঃ প্রোফেজ

  • পর্যায় – ২ঃ প্রো-মেটাফেজ

  • পর্যায় – ৩ঃ মেটাফেজ

  • পর্যায় – ৪ঃ অ্যানাফেজ

  • পর্যায় – ৫ঃ টেলোফেজ 

 

প্রোফেজ

মাইটোসিস কোষ বিভাজনের সবচেয়ে প্রথম ও দীর্ঘস্থায়ী ধাপ। এই ধাপে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়। পানি বিয়োজনের ফলে এই ধাপে নিউক্লিয়ার জালিকা ভেঙ্গে গিয়ে আঁকাবাঁকা সুতার মত ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয়।

প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে যা সেন্ট্রোমিয়ার নামক একটি বিন্দুতে যুক্ত থাকে। ক্রোমোজোমগুলো লম্বালম্বিভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপাদন করে। কুন্ডলিত থাকে বলে এদের সংখ্যা গণনা করা যায়না। প্রোফেজ ধাপের শেষ অবস্থায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা কোষ থেকে উধাও হয়ে যায়।

প্রো মেটাফেজ

প্রো মেটাফেজ ধাপে নিউক্লিয়ার পর্দা ও নিউক্লিওলাস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই ধাপে কোষের দুই মেরুতে কতগুলো মাকু আকৃতির তন্তুর দেখা যায়, একে স্পিন্ডল যন্ত্র বলে।  প্রাণীকোষে পূর্বে বিভক্ত সেন্ট্রিওল কোষের দুই মেরুতে অবস্থান করে এবং চারদিক থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত করে। একে অ্যাস্টার রশ্মি বলে এবং সেখান হতে স্পিন্ডল তন্তু সৃষ্টি হয়। স্পিন্ডল তন্তু গুলো পরস্পর যুক্ত হয়ে স্পিন্ডল যন্ত্র গঠন করে। স্পিন্ডল যন্ত্রের মধ্যভাগকে বিষুবীয় অঞ্চল বলে এবং স্পিন্ডল যন্ত্রের দুই প্রান্ত কে মেরু বলে।

মেটাফেজ

মেটাফেজ ধাপে ক্রোমোজোমগুলো স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে আসে। ক্রোমোজোমগুলো সেন্ট্রোমিয়ার এর সাথে স্পিন্ডল তন্তুতে আটকে থাকে। যে সকল স্পিন্ডল তন্তুতে ক্রোমোজোম থাকে তাদেরকে আকর্ষণ তন্তু বলে। এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সর্বাধিক মোটা ও খাটো থাকে। ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে আকর্ষণ কমে যায় ও বিকর্ষণ শুরু হয়। এ পর্যায়ের শেষের দিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয় এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিয়াসের সম্পূর্ণ উধাও হয়ে যায় কোষ থেকে।

অ্যানাফেজ

অ্যানাফেজ ধাপের প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুই ভাগে বিভক্ত হয় এবং প্রতিটি ক্রোমাটিডে একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। ক্রোমাটিড গুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে। এই ধাপের শেষে অপত্য ক্রোমোজোম গুলো অর্ধেক এক মেরুর দিকে এবং বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই ধাপে মেরুমুখী ক্রোমোজোম গুলো ইংরেজি বর্ণমালা V, L, J অথবা I আকৃতিবিশিষ্ট হয়। এদের যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, এক্রোসেন্ট্রিক ও টেলোসেন্ট্রিক বলে। এই ধাপে ক্রোমোজোমগুলোর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

টেলোফেজ

এটি মাইটোসিস এর শেষ ধাপ। টেলোফেজ ধাপে অপত্য ক্রোমোজোম গুলো কোষের বিপরীত মেরুতে এসে পৌঁছায়। ক্রোমোজমে পানি যোজন ঘটে, ফলে ক্রোমোসোম সরু ও লম্বা আকার ধারন করে। উভয় মেরুর ক্রোমোজোম গুলোকে ঘিরে নিউক্লিয়ার পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের পুনরায় আবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেন সৃষ্টি হয় এবং দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। তবে প্রাণী কোষের উভয় মেরুতে একটি করে সেন্ট্রিওল সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় ক্রোমোজোম গুলো সরু ও লম্বা হয়ে জট পাকিয়ে নিউক্লিয়ার জালিকা গঠন করে। শেষ পর্যায়ে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো জমা হয় ও কোষপ্লেট গঠন করে। এই ধাপের শেষে দুই মেরুতে দুটি অপত্য কোষ গঠিত হয় ।

মাইটোসিস এর গুরুত্ব

  • দেহ গঠন ও দৈহিক বৃদ্ধি

  • বংশবৃদ্ধি

  • জননাঙ্গ সৃষ্টি ও জনন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি ৪. নির্দিষ্ট আকার-আয়তন রক্ষা

  • নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের ভারসাম্য রক্ষা

  • ক্রোমোসোমের সমতা রক্ষা

  • ক্ষতস্থান পূরণ

  • ক্রমাগত ক্ষয়পূরণ ও কোষের পুনরুৎপাদন।

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال