মাথার ভেতর থাকে ঘিলু। সেই ঘিলুকে অবিরত পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করছে রক্তনালীরা। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যেমনি জালের মতো নদী বয়ে গেছে হিজিবিজি হয়ে। মাথার ঘিলুর ভেতরও রক্তনালীরা তৈরি করছে হিজিবিজি। মাথা লাফাচ্ছে প্রাণের উন্মাদনায়। এজন্যই তো কখনো আমরা কপাল চেপে বের করে আনছি কাব্য-সাহিত্য, কখনোবা ব্রিজ কিংবা অট্টালিকার ডিজাইন, কখনো ঔষুধের ফর্মুলা কখনো আবার বড় বড় হিসাবের সমাধান। বুঝতে পারছি ড্রয়িংরুমে বসে প্র¯্রাব-পায়খানা করা যাবে না, কর্মটা সারতে বাথরুম আছে। সামনে দেয়াল পড়লে মেনে নিচ্ছি- এখন হাঁটা বন্ধ, হাঁটলে ধাক্কা খেতে হবে। গাছকে গাছই বলছি, বইকে বলছি বই। দশ বছর পরও প্রিয় বন্ধুর চেহারা চিনে বলছি- তুই সেই ফটকা না? অনেক মোটা হয়ে গেছিস! আয় পাঞ্জা লড়ি।

কাজের কথায় আসি। ধরা যাক, কোন কারণে ঘিলুর ভেতর থাকা রক্তনালীর প্রাচীর গেলো পুরু হয়ে। হতে পারে তা চর্বি জমে। তাহলে নালীগুলো সরু হবে। রক্ত প্রবাহিত হবে কম। ঘিলু সাহেবের পুষ্টির ঘাটতি হবে। ঘিলুর বিভিন্ন অংশের কাজ বিভিন্ন। সামনের অংশ বুদ্ধিভিত্তির নিয়ন্ত্রক। মাঝের একটা অংশ আছে যা হাত পা নাড়তে সহায়তা করে। কোন অংশ বাকশক্তি, কোন অংশ দৃষ্টিশক্তি বা কোন অংশ শ্রবণ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। পেছনে একটা অংশ আছে, শরীরকে সে ভারসাম্যে রাখে।

আরেকটা ঘটনা ঘটতে পারে। পুরু রক্তনালীর ভেতর থেকে রক্তরা নালীকে চাপ দেয় বেশি। ফলে নালী ফেটে যেতে পারে। রক্তপাত হবে ঘিলুর মধ্যে। সেই রক্ত জমাট বাঁধবে। চাপ  দিবে মস্তিষ্কে। তীব্র মাথা ব্যথা, বমি, অচেতন হওয়া পর পর ঘটতে পারে।

প্রথম ধরনের রোগই বেশি লোকের হয়। এতে মারা যায় কম, কিন্তু যাদের হয় তাদের হাত পা অবশ থাকে দীর্ঘদিন। কথা জড়িয়ে জড়িয়ে বলে। একে বলে ইশকেমিক স্ট্রোক। মাথার রক্তবঞ্চিত হওয়া স্ট্রোক।

দ্বিতীয় ধরনের রোগ কম লোকের হয়। মারা যায় বেশি, কিন্তু যারা বেঁচে যায় তাদের হাত পা অবশ থাকে না দীর্ঘদিন। বহুদিন কথা জড়িয়েও বলতে হয় না। একে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক বা রক্তপাত জনিত স্ট্রোক।

Untitled-2

স্ট্রোক কিন্তু বাচ্চাদেরও হতে পারে। জন্ম থেকেই কিছু বাচ্চার রক্তনালী সঠিকভাবে তৈরি হয় না। রক্তের ভেতর এমন কিছু ফ্যাক্টর আছে যা রক্তজমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। জন্মগত ভাবেই কিছু বাচ্চার এসব ফ্যাক্টর অভাব থাকে। এদের প্রবহমান রক্ত জমাট বাঁধে। ফলে স্ট্রোক হতে পারে। কিছু হতভাগা শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মে। এই হৃদরোগ রক্ত ঠিকমতো  হৃদয় থেকে মাথায় প্রবাহিত হতে দেয় না বা দিলেও দূষিত রক্ত দেয়। ফলে স্ট্রোক হতে পারে।

স্ট্রোক দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের এক-পঞ্চমাংশ এক মাসের মধ্যে মারা যায়। যারা বেঁচে থাকে তাদের প্রায় অর্ধেক লোক বিছানাগত হয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করে। তাই এসো, ঘিলু ঘোলা হবার  আগেই আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি...