মহান সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টি জগতের প্রতিটি সৃষ্টিকেই দিয়েছেন অনন্য বৈশিষ্ট্য যাতে এটি তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে সহজেই অভিযোজিত হতে পারে। জোনাকি পোকাকে এরকম ভাবে দান করেছেন আলো নিঃসরণের ক্ষমতা। রাতের আঁধারে জোনাকির স্নিগ্ধ আলো যে কারো মনকেই শীতল করে দেবে। কিন্তু কৌতূহলী মন শুধু শীতল থেকেই ক্ষান্ত নয় বরং এই শীতলতার কারণ অন্বেষণে ব্যস্ত। আমরাও আজ সেই কৌতূহলী মনের অন্বেষণ থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করব।

জোনাকি পোকার এই আলো দানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ‘Bioluminescence’ বা জৈব দীপ্তি শব্দটির। কারণ এটাই হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিশেষত জোনাকি পোকা আলো উৎপাদন করে। এটি আবার কেমিলুমিনিসেন্স বা রাসায়নিক দীপ্তির (Chemiluminescence) একটি ধরন।

এরকম আলোদানকারী জীবের বিস্তৃতি কতটুকু তা আমাদের সবার আগে জানা প্রয়োজন। অনেকেই ভেবে বসতে পারো শুধু বুঝি জোনাকি পোকাই এ আলো তৈরির বাহাদুরি করতে পারে। কিন্তু না উদ্ভিদ ও স্তন্যপায়ী প্রানি ছাড়া মোটামুটি বাকি সব শ্রেণির মধ্যেই এ রকম জীব রয়েছে। তবে এরা বেশিরভাগই সামদ্রিক, স্বাদু পানিতে এদের পাওয়া যায় না। তাই আমাদের দেশে জোনাকি পোকা ছাড়া অন্য কোনো প্রজাতি চোখে পড়ে না। একই কাজ করতে সক্ষম আরো কিছু প্রাণী হচ্ছে ব্ল্যাক ড্রাগন ফিশ, ক্যাট শার্কসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ এক ধরনের স্কুইড, ক্লিক বিটল নামের পোকা, এমনকি এ তালিকায় আছে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের নামও।

Untitled-12

এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো এ আলো কিভাবে তৈরি হয় অর্থ্যাৎ এর রাসায়নিক ব্যাখ্যা, এই আলো জীবগুলো কি কাজে লাগে এবং এই আলোকে কোনভাবে আমাদের কাজে লাগানো যায় কি না।

এই আলো তৈরির প্রধান উপাদান লুসিফেরিন। লুসিফেরিন বিন্যস্ত হয়েই আলো উৎপন্ন করে। এর পাশাপাশি লুসিফেরেজ এনজাইম অথবা ফটোপ্রোটিন এ দুটির একটি লাগবেই। লুসিফেরেজ এনজাইমের প্রভাবে লুসিফেরিন অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়। এটিই হচ্ছে সেই কাক্সিক্ষত বিক্রিয়া যার মাধ্যমে আলো তৈরি হয়। এই বিক্রিয়ায় যে শক্তি উৎপাদন হয় তা আলোক শক্তির আকারে নির্গত হয়। অক্সিলুসিফেরিন নামে একটি যৌগও বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে পাওয়া যায়।

Untitled-13

এখন এই আলো দিয়ে জীবগুলো কী সুবিধা পায়? সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিজগতে কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। এই আলো জীবগুলো শিকার খোঁজার জন্য, শিকারির হাত থেকে বাঁচার জন্য ক্যামোফ্লেজ তৈরি, একই প্রজাতির অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করাসহ আরো কিছু কাজে ব্যবহার করে। শিকারির হাত থেকে বাঁচার ব্যাপারটা একটু না বললেই নয়। অন্ধকার রুমে হঠাৎ করে কারো চোখে যদি লাইট মারা হয় তাহলে সে যেরকম চমকিয়ে উঠবে, শিকার করতে আসা সেই প্রাণিও একইভাবে বায়ো লিমিনিসেন্ট প্রানির আলোর জলকে চকম খেয়ে ফিরে যাবে।

Bioluminescence নিয়ে এখনও খুব বেশি গবেষণা হয়নি। তবে জীববিজ্ঞানী এবং জৈবরাসায়নিক প্রকৌশলীরা চিন্তা করছেন এই জীবগুলোকে কিভাবে মানুষের কল্যাণে লাগানো যায়। কিছু বাস্তব প্রয়োগও আছে। যেমন পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করার জন্য ‘Microtox’ ব্যবহার করা হয়। এতে থাকে আলো প্রদানকারী ব্যাক্টেরিয়া Vibrio fischeri। যখন পানিতে কোনো বিষাক্ততা থাকে তখন এটির আলোর তীব্রতা কমে আসে। ইতো মধ্যে  জোনাকিকে মানুষের দৈনন্দিন কাজে উপকারে লাগানোর জন্য কিছু ধারনাও তৈরি হয়েছে। যেমন প্রথমে বলেছিলাম কিছু ছত্রাক গাছে লেগে থেকে আলো তৈরি করে। এই গাছগুলো যদি রাস্তায় ব্যবহার করা হয় তবে রাস্তাও বিদ্যুৎ ছাড়া আলোকিত হবে। সে মৃদু আলোতে হাটতে কেমন লাগবে ভাবতে পারো !