কুয়োর ভূত
এক গ্রামে একটি কুয়া ছিল। তা ছিল ভূতুরে। গ্রামের লোকজন যখনই পানি তুলতে কুয়াতে বালতি ফেলত।
তখন প্রতিবারই বালতি শূন্য রশি উঠে আসত। এমন অদ্ভুতকাণ্ড বারবার ঘটায় গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল
যে, কুয়াটি জীনের বাসা। এখানে ভয়ংকর একটাজীন বাস করে।
কিন্তু এভাবে আর কয়দিন চলে?
গ্রামের মানুষদের পানি সংগ্রহ করতে হবে। তারা বলল এর একটা বিহিত করাদরকার।
:
কিন্তু কুয়াতে নামবে কে?
কেউ সহজে রাজি
হচ্ছে না।
এমন সময় এক যুবতী কুয়াতে নামতে রাজি হলো।
সে বলল, আমি কুয়াতে নামব। আমার কোমরে রশি
বেঁধে নামিয়ে দিবেন। তবে শর্ত হল রশির
অপর প্রান্তে অবশ্যই আপনাদের সাথে আমার
ভাইকে থাকতে হবে।
:
গ্রামের লোকজন তার শর্ত শুনে বেশ আশ্চর্য
হলো। গ্রামের শক্তিশালী সুঠাম এতগুলো মানুষ
থাকতে তার ভাইকে লাগবে
কেন?
প্রথমে তারা যুবককে বিষয়টা বোঝাতে চেষ্টা
করল। তবুও তার এক কথা অবশ্যই তার ভাইকে সাথে রাখতে হবে।
তার ভাইকে খুঁজে আনা হলো।
সবাই মিলে যুবতীকে কুয়াতে নামিয়ে দিল। :
ভেতরে গিয়ে সে দেখল, কুয়াতে একটি বানর।
এই শয়তান বানরটিই বালতি রেখে দিত। যুবতী
বানরটিকে ধরে কাঁধে বসিয়ে রশি টানার নির্দেশ দিল।
বানরটি ছিল যুবতীর কাঁধে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই
সর্বপ্রথম দৃষ্টিগোচর হল বানরের চেহারা। হঠাৎ
করে ভূতদর্শন চেহারা দেখে সবাই মনে করল,
জীনটা উঠে আসছে। ওমনি রশি ফেলে সব
দে ছুট।
কিন্তু একজন রশি ছাড়ল না। তার প্রিয় ভাইটি রশি ছাড়ল না। বহুকষ্টে ভাইকে টেনে তুলল উপরে। ফলে তার বোন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেচে গেল।
তখন সবাই বুঝতে পারল কেন সে ভাইকে রশি
ধরার শর্ত দিয়েছিল।
কারণ, পৃথিবীতে সবাই বিপদের সময় দূরে সরে
গেলেও ভাই সরবে না।
বিরল ফাঁসি
১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর,পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যায় বিরল এক ঘটনা। উল্লেখিত দিনটিতে পৃথিবীতে প্রথম এবং শেষ কোনও হাতির ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয়। ঘটনাটি ঘটে আমেরিকার শহর টেনিসে,সেখানকার এক সার্কাস দলে কাজ করতো ম্যারি নামের এক হাতি। ম্যারি সার্কাসে দুর্দান্ত সব কসরত করে মানুষকে বিমোহিত করে রাখতো। ম্যারিকেই দেখতেই সার্কাসে ভিড় হতো অনেক বেশি। আর এই সার্কাস দলের নাম ছিলো চার্লি স্পার্কস। এই দলের মালিক হাতিদের পুরোনো মাহুতকে অপসারণ করে নতুন কর্মচারী রেড এল্ড্রিক্সকে নিয়োগ দেয় হাতিদের দেখা শুনা করতে এবং হাতিদের নিয়ে সার্কাস খেলা দেখাতে। যদিও রেড হাতিদের বিষয়ে অতটা অভিজ্ঞ ছিলোনা। এছাড়া নতুন কর্মচারী হওয়ায় সে হাতিগুলোর আচরণ-ইচ্ছে-চলাফেরা ইত্যাদি এসবও ঠিকঠাক বুঝতোনা।
একদিন খেলা চলার সময় রেড ম্যারির উপরে বসে সার্কাস দেখাচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক চলছে ম্যারি দুই পা তুলে পেছন পায়ে ভর দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে। কিন্তু মাহুত রেড অযথাই ম্যারির কানে লোহার শিক দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক সময় ম্যারির মেজাজ বিগড়ে যায়, রগচটা ম্যারি তার মাহুত রেডকে টেনে নিচে নামিয়ে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে। এ ঘটনায় সমগ্র সার্কাস প্রাঙ্গণ এবং শহর জুড়ে ম্যারি বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠে। সবার এক দাবি হত্যাকারী হাতিকে তার শাস্তি দিতে-ই হবে। তা না হলে আন্দোলন কখনোই থামবেনা। একটি হাতি থেকে একজন মানুষের মূল্য অনেক বেশি। কেউই চার্লি স্পার্কস এর কোন শো দেখতে যাচ্ছিলোনা।
সার্কাস দলটিই এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সার্কাস মালিক কোন মতেই জনগণকে বুঝাতে পারছিলেন না রেড হত্যায় ম্যারির দোষ যতটা তার চেয়ে বেশি রেড ম্যারিকে রাগিয়ে দেয়ার দোষ টি রেড এর আর তাই ম্যারি রেগে যায়। ম্যারি একটি অবলা প্রাণী তার দোষ নেই। কিন্তু মানুষ তা বুঝলোনা।শেষে বাধ্য হয়েই সার্কাস মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যারিকে হত্যা করা হবে। কিন্তু কিভাবে? বাগড়া বাধে এখানেই। বিশাল দেহী এশিয়ান এই হাতি এতোই বড় ছিলো যে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পন্থা নিয়েই অনেক ভাবতে হয় সবাইকে।
শেষে সিদ্ধান্ত হয় ম্যারিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হবে। তাই বিশাল ক্রেন নিয়ে আসা হল। শহরের বিক্ষুব্দ সব নাগরিককে দাওয়াত দেয়া হলো। সবাই মেতে উঠলো ভয়ংকর এক হত্যা প্রত্যক্ষ করতে। সবার চোখে তখন প্রতিশোধের ক্রোধ টগবগ করছে। ম্যারিকে অবশেষে বিশাল এক চেইন দিয়ে ক্রেনের হুকে বাঁধা হলো। ক্রেন যেই চালু করা হলো মুহূর্তে ম্যারিকে এক টানে ২০ ফুট উপরে তুলে নিলো। ম্যারি অনেক স্বাস্থ্যবান হওয়াতে ক্রেনের চেইন ছিঁড়ে ২০ ফুট উপর থেকে পড়ে যায়।
এসময় আঘাতের কারনে ম্যারির মেরুদণ্ড ও পা ভেঙ্গে যায়,আর গলা কেটে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। কিন্তু উপস্থিত মানুষগুলো…..? কারো মন গলেনা, আবার ম্যারিকে ক্রেনের চেইনের সাথে বাঁধা হলো। থেমে গেলে চলবেনা, শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।পরের চেষ্টায় ম্যারি ফাঁসির চেইনে ছটফট করতে করতে মারা যায়। আসলে ম্যারি মারা যায়নি সেদিন! ওইদিন চেইনে ঝুলে ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো মানুষের আর সমাজের মানবতা কে। আমরা আশরাফুল মাকলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব। আর আমরা মাঝে মাঝে এমন কাজ করি যা আমাদের পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী থেকেও নিচে নামিয়ে দেয়!
৫ মিনিটে মাত্র ৫টি গল্প
যা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেবে ----
গল্প-১
বাবা গোসলে, মা রান্না ঘরে আর
ছেলে টিভি দেখছিল।
এমন সময় দরজায় ঘণ্টা বাজল। ছেলে
দৌড়ে গিয়ে দরজা
খুলে দেখল, পাশের বাসার করিম
সাহেব দাঁড়িয়ে।
ছেলে কিছু বলার আগেই করিম সাহেব
বললেন, ‘আমি
তোমাকে ৫০০ টাকা দেব, যদি তুমি ১০
বার কান ধরে উঠবস
কর।’
বুদ্ধিমান ছেলে অল্প কিছুক্ষণ চিন্তা
করেই কান ধরে
উঠবস শুরু করল, প্রতিবার উঠবসে ৫০ টাকা
বলে কথা।
শেষ হতেই করিম সাহেব ৫০০ টাকার
নোট ছেলের হাতে
ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
বাবা বাথরুম থেকে বের হয়ে
জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে ছিল
দরজায়?’
‘পাশের বাসার করিম সাহেব’, উত্তর
দিল ছেলে।
‘ও’, বললেন বাবা, ‘আমার ৫০০ টাকা কি
দিয়ে গেছেন?’
শিক্ষণীয়বিষয়ঃ
আপনার ধারদেনার তথ্য শেয়ারহোল্ডারদের থেকে গোপন করবেন না। এতে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রক্ষা পাবেন।
গল্প-২
সেলসম্যান, অফিস ক্লার্ক ও
ম্যানেজার দুপুরে খেতে
যাচ্ছিলেন। পথে তাঁরা একটি
পুরোনো প্রদীপ পেলেন।
তাঁরা ওটাতে ঘষা দিতেই দৈত্য বের
হয়ে এল।
দৈত্য বলল, ‘আমি তোমাদের একটি
করে ইচ্ছা পূরণ করব।’
‘আমি আগে! আমি আগে!’ বললেন অফিস
ক্লার্ক, ‘আমি
বাহামা সমুদ্রপারে যেতে চাই,
যেখানে অন্য কোনো
ভাবনা থাকবে না, কাজ থাকবে না।’
‘ফুঃ...!!’ তিনি চলে গেলেন।
‘এরপর আমি! এরপর আমি!’ বললেন
সেলসম্যান, ‘আমি
মায়ামি বিচে যেতে চাই, যেখানে
শুধু আরাম করব।’
‘ফুঃ...!!’ তিনিও চলে গেলেন।
‘এখন তোমার পালা’, দৈত্য
ম্যানেজারকে বলল।
ম্যানেজার বললেন, ‘আমি ওই দুজনকে
আমার অফিসে
দেখতে চাই।’
শিক্ষণীয়বিষয়ঃ
সব সময় বসকে আগে কথা বলতে দেবেন। তা না হলে নিজের কথার কোন মূল্য থাকবে না।
গল্প-৩ঃ
একটি ইগল গাছের ডালে বসে আরাম
করছিল।
এমন সময় একটি ছোট খরগোশ ইগলটিকে
দেখে জিজ্ঞেস
করল, ‘আমিও কি তোমার মতো কিছু না
করে এভাবে বসে
আরাম করতে পারি?’
ইগল উত্তর দিল, ‘অবশ্যই, কেন পারবে না।’
তারপর খরগোশটি মাটিতে এক
জায়গায় বসে আরাম
করতে থাকল। হঠাত্ একটি শিয়াল এসে
হাজির, আর লাফ
দিয়ে খরগোশকে ধরে খেয়ে ফেলল।
শিক্ষণীয়বিষয়
যদি কোনো কাজ না করে বসে বসে
আরাম করতে চান,
তাহলে আপনাকে অনেক ওপরে
থাকতে হবে।
গল্প-৪
একটি মুরগি ও একটি ষাঁড় আলাপ করছিল।
‘আমার খুব শখ ওই গাছের আগায় উঠব,
কিন্তু আমার এত
শক্তি নেই’, মুরগিটি আফসোস করল।
উত্তরে ষাঁড়টি বলল, ‘আচ্ছা, তুমি আমার
গোবর খেয়ে
দেখতে পার, এতে অনেক পুষ্টি আছে।’
কথামতো মুরগি পেট পুরে গোবর
খেয়ে নিল এবং আসলেই
দেখল সে বেশ শক্তি পাচ্ছে। চেষ্টা
করে সে গাছের
নিচের শাখায় উঠে পড়ল।
দ্বিতীয় দিন আবার খেল, সে তখন এর
ওপরের শাখায় উঠে
গেল।
অবশেষে চার দিন পর মুরগিটি গাছের
আগায় উঠতে সক্ষম
হলো।
কিন্তু খামারের মালিক যখন দেখলেন
মুরগি গাছের
আগায়, সঙ্গে সঙ্গে তিনি গুলি করে
তাকে গাছ থেকে
নামালেন।
শিক্ষণীয়বিষয়ঃ
ফাঁকা বুলি (বুল শিট) হয়তো আপনাকে
অনেক ওপরে নিয়ে
যেতে পারে, কিন্তু আপনি বেশিক্ষণ
ওখানে টিকে
থাকতে পারবেন না।
গল্প-৫
একটি পাখি শীতের জন্য দক্ষিণ দিকে
যাচ্ছিল। কিন্তু
এত ঠান্ডা ছিল যে পাখিটি শীতে
জমে যাচ্ছিল এবং
সে একটি বড় মাঠে এসে পড়ল।
যখন সে মাঠে পড়ে ছিল, একটি গরু তার
অবস্থা দেখে
তাকে গোবর দিয়ে ঢেকে দিল।
কিছুক্ষণ পর পাখিটি
বেশ উষ্ণ অনুভব করল। যখন গোবরের গরমে
সে খুব ঝরঝরে
হয়ে উঠল, আনন্দে গান গেয়ে উঠল।
এমন সময় একটি বিড়াল পাশ দিয়ে
যাচ্ছিল, পাখির গান
শুনে খুঁজতে লাগল কোথা থেকে শব্দ
আসে। একটু পরই সে
গোবরের কাছে আসে এবং সঙ্গে
সঙ্গে গোবর খুঁড়ে
পাখিটিকে বের করে তার আহার
সারে।
শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
১. যারা আপনার ওপর কাদা ছোড়ে,
তারা সবাই-ই আপনার
শত্রু নয়।
২. যারা আপনাকে পঙ্কিলতা থেকে
বের করে আনে,
তারা সবাই-ই আপনার বন্ধু নয়।
৩. এবং যখন আপনি গভীর পঙ্কিলতায়
নিমজ্জিত, তখন মুখ
বেশি না খোলাই শ্রেয়।
নিজের বাড়ি
একজন বয়স্ক রাজমিস্ত্রী তার কাজ থেকে অবসর নিতে চাইলো। তাই সে তার মালিকের কাছে গিয়ে বললো,’বস,আমি এই বাড়ি বানানোর কাজ থেকে অবসর নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটাতে চাই।‘
তার মালিক এতে কিছুটা দুঃখ পেল কারন সে ছিলো সবচেয়ে দক্ষ ও কর্মঠ রাজমিস্ত্রী। সে বললো,'ঠিক আছে,কিন্তু তুমি কি চলে যাওয়ার আগে আর একটি মাত্র বাড়ি বানাতে আমাদের সাহায্য করবে?’ বয়স্ক রাজমিস্ত্রী এই প্রস্তাবে স্বানন্দে রাজী হয়ে গেল।
কিন্তু কাজ শুরু করার পর দেখা গেল তার মন সেখানে ছিল না এবং সে সবসময় তার অবসরের কথা ভেবে অন্যমনস্ক থাকতো। সবসময় সে বাড়ির চিন্তা করতো।তাই এর আগে যত কাজ সে করেছিলো এই কাজটাই তার করা সবচেয়ে খারাপ কাজ হয়ে গেল।
যখন সে বাড়িটি তৈরী করা শেষ করলো তখন তার মালিক বাড়িটি দেখতে এলো এবং বৃদ্ধের হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বললো,’এটা এখন থেকে তোমার বাড়ি,তোমার প্রতি আমার উপহার।'
এই কথা শুনে বৃ্দ্ধ আফসোস করে উঠলো!
সে মনে মনে ভাবলো,'হায় হায়!যদি আমি শুধু একবার জানতাম যে আমি আমার নিজের বাড়ি তৈরী করছি! তাহলে এটা আমার জীবনে করা সবচেয়ে ভাল কাজ হতো!'
বাস্তবেও আমরা প্রতিটা দিন আমাদের জীবনকে এই বাড়ির মতই তৈরী করে চলেছি। কিন্তু আমরা প্রায়ই তা ভুলে যাই। আর তাই সব কাজে আমাদের বেস্ট টার চেয়ে অনেক কম চেষ্টাটা করি,অনেক কম পরিশ্রমটা দেই।আমরা যদি আজ এই সত্যটা উপলব্ধি করতে পারি তবে আমরা হয়তো আমাদের সেরা পরিশ্রমটাই দিয়ে জান্নাতের বাড়ি টি সুন্দর করতে পারবো।
জাহাজ মেরামত
একদা এক বিরাটাকার জাহাজে যান্ত্রিক গোলযোগ পরিলক্ষিত হয়। জাহাজ মেরামতের অভিপ্রায়ে মালিকের চেষ্টায় কোন ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হয়নি। আজ এক জনকে, কাল অন্য জনকে, পরশু আরেকজনকে দিয়ে চেষ্টা চালিয়েই যাইতেছিল। কিন্তু কাহারো পক্ষেই এই জাহাজটিকে মেরামত করা সম্ভব হইতেছিল না। দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াও যখন কোন কুল কিনারা করিতে পারিতেছিল না তখন এক বৃদ্ধ লোকের ডাক পরিল। কারণ বৃদ্ধর যৌবনকালে এমন একটি সমস্যার সমাধান করিয়াছিল বলিয়া জনশ্রুত আছে।
বয়োবৃদ্ধ ভদ্রলোক বিশাল এক যন্ত্রপাতির বাক্স লইয়া হাজির হইয়া দ্রুতই কাজে নামিয়া পরিল। সে ইঞ্জিনের শুরু হইতে শেষ পর্যন্ত খুবই সতর্কতার সহিত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরখ করিয়া দেখিল। জাহাজের মালিক বৃদ্ধর সহিত সর্বক্ষণ লাগিয়া থাকিল এবং বোঝার চেষ্টা করিল বৃদ্ধা কিভাবে জাহাজ মেরামত করিবে।
পরিদর্শন শেষ করিয়া বৃদ্ধলোকটি তাহার বিশাল যন্ত্রপাতির বহর হইতে একটি ছোট্ট হাতুড়ি বাহির করিয়া ধীরে সুস্থে এঞ্জিনের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় হাতুড়ি দিয়া কয়েকটা আঘাত প্রদান করিল। সঙ্গে সঙ্গেই এঞ্জিনটি সচল হইয়া উঠিল। কর্মসম্পাদনে বৃদ্ধা সাবধানে তাহার হাতুড়ি ব্যাগে রাখিল।
জাহাজ সারাই সুসম্পন্ন।
এক সপ্তাহ পর
জাহাজের মালিক ১ (এক) লক্ষ টাকার একটি ফর্দ হাতে পাইয়া চোখ ছানাবড়া।
অসম্ভব!!! বুইড়া তো কিছুই করে নাই। সামান্য হাতুড়ী পিটাইয়া এত টাকা চায়?
বৃদ্ধার কাছে বিলটি ফেরত পাঠিয়ে অনুরোধ করা হইলো “দয়া করিয়া তালিকাবদ্ধ ভাবে বিল প্রদান করুণ।"
বৃদ্ধার বিল:
হাতুড়ির বাড়ি দেয়ার জন্য .................................................. ২০০.০০ টাকা
কোথায় হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিতে হবে সেটা জানার জন্য .... ৯৯,৮০০.০০ টাকা
এই গল্পে আমরা কি শিখলাম?
উদ্যম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কোথায় উদ্যমী হলে অন্যের সাথে নিজের পার্থক্য দৃশ্যমান হবে সেটা জানাটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
তিন চোরের গল্প
অনেক দিন আগের কথা। এক জায়গায় তিনটে চোর থাকত। একদিন তারা চুরি করলো এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে। তারপর সেই সম্পদগুলো নিয়ে তারা শহরের বাইরে গভীর জঙ্গলে চলে গেল, ভাগাভাগি করবে বলে। এটা করার আগে তাদের খুব খিদে পেয়ে গেলো। সেইজন্য তাদের মধ্যে একজন শহরে গেল খাবার আনতে। সে শহরে গিয়ে খাবার খেল আর বাকিদের জন্য যে খাবারটা নিল তাতে বিষ মিশিয়ে দিল কারণ সে চেয়েছিল সব সম্পদ সে একা নেবে।
অন্যদিকে, বাকি চোর দুটো জঙ্গলে বসে মতলব আটছে। চোর দুটো গাছের পিছনে লুকিয়ে ছিল। যেই প্রথম চোরটা এসেছে অমনি ওকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। তারপর তারা শান্তিতে বসে খাবারটা খেল। যেইনা খাবারটা খেল অমনি খাবারের বিষে তারা দুজনেও মারা গেল। অতএব তারা নিজেদের জালে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ল।
সওদাগরের আমানত
সবুজদিয়া গ্রামে এক সওদাগর বাস করতো। সে বাণিজ্য করতে দূর দেশে যাবে। তার কাছে কিছু সোনার মোহর ছিলো। সেই গ্রামেতার আপন বলতে কেউ নেই। যারা ছিলো তাদের ওপর সওদাগরের কোন আস্থা ছিলো না। মোহরগুলো কোথায় রেখে যাবে এই নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। পরে খুব চিন্তাভাবনা করে বের করলো। পাশের বাড়িতে বুড়িমা আছে। খুবই ভালো মানুষ।
ঈমানদার। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। রোজা পালন করে। তার কাছে রাখা যেতে পারে। সে আমানতের কোন দিনও খেয়ানত করবে না। পরদিন সে বুড়িমার কাছেগেল এবং বলল ‘বুড়িমা এই পুঁটলিটা একটু যত্ন করে গুপ্তস্থানে লুকিয়ে রাখবে। আমি দূর দেশে সওদা করতে যাচ্ছি। ফিরতে ছয় মাস সময় লেগে যাবে। ফিরে এসে তোমার কাছ থেকে আমার আমানতের জিনিস আমি ফেরত নিবো।’ বুড়ি মা বললো : ‘ঠিক আছে বাবা, আমি বেঁচে থাকতে তোমার এই জিনিস কাউকে ধরতে দেবো না।’ সওদাগর এবার নিশ্চিন্তে বাণিজ্য করতে চলেযায়। সওদাগরযাবার কিছুদিন পরই বুড়িমা অসুস্থ হয়েপড়ে। দিন যায় রাতযায় বুড়িমার অসুখটা বেড়েই চলে। বুড়িমার খুবই কষ্ট। দিন দিন কষ্টআরো বেড়ে যায়। বুড়িমা সওদাগরের এইআমানতের জিনিস নিয়েমহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। বুড়িমা বুঝতেপারে যেতার মৃত্যুতার কাছে এসে পড়েছে। আপনজন বলতে বুড়িমার কেউ এই গ্রামেছিলো না। কার কাছে রেখেযাবে এই আমানত। পরে চিন্তাভাবনা করলো, এই গ্রামের মোড়লের তো অনেক ধনসম্পদ আছে। সেএগুলোর প্রতি লোভ করবে না। এখানেতো সামান্য কয়েকটি পিতলের পয়সা মনেহয়। সেদিনই অসুস্থ শরীর নিয়ে মোড়লের কাছে গেলো এবং বললো :
‘বাবা, আমি তো মরে যাবো তুমি আমার একটা কথা রাখবে বাবা।’মোড়ল
বলল : ‘কি কথা বুড়িমা?’
বুড়িমা বলল : ‘আমার এই পুঁটলিটা তোমার কাছে আমানত হিসেবে রাখতে হবে। এই পুঁটলিটার মালিক পাশেরবাড়ির সওদাগর। সওদাগর এলে তার হাতে তুমি নিজদায়িত্বে তুলে দেবে বাবা। আমার একথাটা তোমার রাখতেহবে।’ ঠিক আছে বুড়িমা, ঐ সিন্ধুকটায় ভালো করেভরে রাখবো।’ বুড়িমা সুন্দর করেনিজ হাতেঐ সওদাগরের সিন্ধুকে ওই পুঁটলিটা রেখেদিলো। বুড়িমা জানতো না ঐ পুঁটলিটাতে কী আছে। বুড়িমা মোড়লের কাছ থেকে বিদায় নিয়েচলে আসে। সে দিন রাতেইবুড়িমা মারা গেলো। মোড়লের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। বুড়িমা মারা যাবার পাঁচ দিন পার না হতেই মোড়ল বুড়িমার সেইপুঁটলিটা খুলেফেললো। পুঁটলিটা খুলেইমোড়ল হতভম্ব। খুশিতে রোশনাই তারচেহারা। সে তো ভীষণ অবাক পুঁটলিটার ভেতর দামি দামি সোনার মোহর যা মোড়ল জীবনে কখনও দেখেনি। এবার মোড়লের সেগুলোর প্রতি লোভ হলো। সে মনে মনে হাসতে থাকে। পুঁটলিটার দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতেতাকিয়ে বলতে থাকে ‘বুড়ি মরেছে ভালোই হয়েছে। এখন এই মোহর আমার হয়ে গেলো।’ ছয় মাস পর সওদাগর ফিরেএলো। বুড়িমার খোঁজ করতেই জানতে পারলো বুড়িমা মারা গিয়েছে অনেকদিন আগে। সে বুড়িমার জন্য বড় দুঃখ প্রকাশ করলো। আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতবাসী করুক বলে দোয়া করলো। কিন্তুবুড়িমা তার পুঁটলিটা কোথায় রেখে গিয়েছে। সে বুড়ির ঘরটায় অনেক তল্লাশি করলো। কোথাও খুঁজে পেলনা তার সেই পুঁটলিটা। সওদাগর এবার চিন্তিত হয়ে পড়লো। চিন্তায় চিন্তায় পাগল হবার পালা। কারণ সে সারাজীবন কষ্ট করে এই সম্পদ অর্জন করেছে। সে মনে মনেগভীর ভাবে চিন্তা করে বুঝতে পারলো। বুড়িমা খুব বুদ্ধিমতী ও সৎ ছিলো। নিশ্চয়ই এই পুঁটলিটা কারো কাছে রেখেগিয়েছে। এবং বলেগিয়েছে আমার আমানত আমার হাতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। যার কাছে রেখে গিয়েছে সে নিশ্চয় ওয়াদার বরখেলাপ করেছে। সে আরো ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখে বুড়িমা যেদিন মারা যায় সেদিন সকালে বুড়িমা মোড়লের বাসায় গিয়েছিলো। তার হাতে একটা পুঁটলি ছিলো। কথাটা শোনা মাত্রই সে মোড়লের কাছে ছুটে যায় এবং মোড়লকে সকল ঘটনা খুলে বলে। মোড়ল হাসতে হাসতে সব অস্বীকার করলো। সওদাগর কে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিলো। সওদাগর মনে মনেভাবলো- আমার এই সম্পদ যদি কষ্টের ওহালালের হয়েথাকে তবে আল্লাহর ইচ্ছায় আমি একদিন না একদিন এই আমানত ফিরে পাবোই। মনের দুঃখে সওদাগর প্রায়ই বুড়িমার কবরের কাছে গিয়ে কাঁদে। একদিন সওদাগর স্বপ্নে দেখেবুড়িমা তাকেবলছে, ‘সওদাগর তুমি আর কেঁদ না। আমার সাথে বেঈমানি করেছে মোড়ল। আমানতের জিনিস খেয়ানত করেছে। এই জন্য সে মারাত্মক শাস্তি ভোগ করবে। তোমার জিনিস যদি হালালের সৎ উপার্জন হয়ে থাকে তবেসেটা অবশ্যই ফেরত পাবে।’ সওদাগর এবার যেন কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে পেলো। দেখতে দেখতে অনেক দিন পার হয়েযায়। একদিন শুনতে পেলো মোড়ল এক কঠিন ভয়াবহরোগেআক্রান্তহয়েছে। কত দেশের কত কবিরাজ এলো ডাক্তার এলো। কেউই কোন রোগ ধরতে পারলো না। মোড়লের ধন সম্পদ আস্তে আস্তে কমতে কমতে ভীষণ খারাপ অবস্থা হতে থাকে। শেষমেশ সেই পুঁটলিটার ওপর নজর পড়লো। সেদিন রাতে মোড়ল যেইওটাকে বের করবে ঠিক সেই মুহূর্তেডাকাত পড়লো মোড়লের বাড়িতে। ডাকাতরা তারসব ধনসম্পদের দলিল বের করেটিপসই নিলো মোড়লের। সাথে নিলো সেই পুঁটলিটা। ঠিক সেদিনই সওদাগর আবার বুড়িমার কবরের কাছেগিয়ে কাঁদতে থাকে। আর বলতেথাকে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য পুঁটলিটা রেখেছিলাম আমার মেয়ে বড় হয়েছে তার বিয়ে হচ্ছে না টাকার জন্য। গ্রামের মোড়ল আমার এই আমানতের জিনিস খেয়ানত করেছে আমি আল্লাহর কাছে অভিশাপ দিচ্ছি যে আমার এই পুঁটলিটা আটকিয়ে রেখেছে তার যেন ভয়াবহ কঠিক অসুখ হয়। পৃথিবীর কোন ডাক্তার কবিরাজ তাকে ভালো করতে পারবে না। বুড়িমার কবরের পাশে ছিলো একটা বড় বটগাছ। সেই বটগাছের নিচে বসে ডাকাতি করা লুটের জিনিস ভাগযোগ করছিলো ডাকাতরা। ডাকাতদের সর্দার হঠাৎ সেই সওদাগরের এই করুণ আর্তনাদ শুনেফেলে। সেমনে মনে চিন্তা করলো তাইতো এই পুঁটলিটা ঐ সওদাগরের। এ পুঁটলিটা চুরি করার জন্য মোড়ল আজ কঠিন ভয়াবহ অসুখে ভুগছে। তার ধনসম্পদ সব গোল্লায় গেছে। আমরা তার পুঁটলিটা ফেরত দিয়ে দেই, নইলে আমাদের ওপরও তার এই অভিশাপ লাগবে। সাথে সাথে ডাকাতদের সর্দার ডাকাতদের সব ঘটনা খুলেবলে। মোড়লের এই করুণ পরিণতির কথা সবাই বুঝতেপারে। ডাকাতদের সর্দার ঐ পুঁটলিটা সওদাগরের কাছেনিয়ে যায় এবং বলে ভাই সওদাগর আমরা বুঝে গেছি, মানুষেরসৎ হালালের পয়সা কখনো হজম করা যায় না। এই নাও তোমার সোনার মোহরের পুঁটলিটা। তুমি তোমার মেয়ের বিয়ে দাও ধুমধাম করে। আর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আর কখনো ডাকাতি করবো না।’ সব ডাকাতকে বিয়ের দাওয়াত দিলো সওদাগর। সওদাগরের মেয়ের বিয়েতে আসার নিমন্ত্রণ পেয়ে ডাকাতরা মহা খুশি হলো। সওদাগর ধুমধামকরে মেয়ের বিয়ে দিলো। সওদাগরের খুশির সীমা রইলো না।
বাঘ ও গরু কাহিনীঃ
একটি গরু জঙ্গলে ঘাস খাচ্ছিল।হঠাৎ তাকে একটি বাঘ আক্রমণ করল। গরুটি অনেক্ষন দৌড়ানোর পর উপায় না পেয়ে পুকুরে ঝাপ দিল। মাত্র শুঁকিয়ে যাওয়াপুকুরটিতে কাঁদা ছাড়া কোন পানি ছিল না। গরুর পেছন পেছন বাঘটিও ঝাপ দিল। বাঘ ও গরু কাঁদায় গলা পর্যন্ত আটকে গেল।
বাঘ রেগে মেগে বলে, "কিরে হারামী তুই আর লাফ দেয়ার জায়গা পেলি না? ডাঙায় থাকলে তোকে না হয় একটু কুড়মুড় করে খেতাম। এখনতো দুজনেই মরব রে।"
গরু হেসে বলে, "তোমার কি মালিক আছে?
বাঘ রেগে বলে, বেটা আমি হলাম বনের রাজা।আমার আবার মালিক কে। আমি নিজেইতো বনের মালিক।
গরু বলে তুমি এখানেই দূর্বল। একটু পর আমার মালিক আসবে। এসে আমাকে এখান থেকে তুলে
নিয়ে যাবে। আর তোমাকে পিটিয়ে মারবে। বাঘ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।
ঠিকই সন্ধ্যা বেলায় গরুটির মালিক এসে বাঘটার মাথায় বাঁশ দিয়ে কয়েকটা বাড়ি দিয়ে মেরে
গরুটিকে টেনে তুলল। গরু হাসতে হাসতে বাড়ি চলে গেল আর বাঘটি মরে একা একা পড়ে রইল।
মূলকথাঃ আমরা যারা মালিকের উপর ভরসা করি আমাদের উপর যত অত্যাচার নির্যাতনই হোক না
কেন, আমাদের মালিক ঠিকই আমাদের রক্ষা করবে। হয়তো সন্ধ্যা পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করতে
হবে।
কাক ও ঈগল
একবার এক লোক পাহাড়ী অঞ্চলে বেড়াতে গেল।ঘুরতে ঘুরতে সে একটি কাক দেখলো যার দুটিডানাই কাটা ছিলো।কাকটির এই অবস্থা দেখে সে ভীষন দুঃখ পেয়েমনে মনে ভাবলো, এটা নিশ্চয়ই কোনো দুষ্টছেলের কাজ।সে ভাবলো, ‘হায় আল্লাহ এই কাকটি এখন উড়বে কিভাবে? আর যদি সে তার খাবারই সংগ্রহনা করতে পারে তবে সে বাঁচবে কিভাবে?’এ সব যখন সে ভাবছিলো তার কিছুক্ষন পর সেদেখলো সে যায়গায় এক ঈগল উড়ে এলো যারঠোঁটে ছিলো কিছু খাবার।খাবারগুলো সে কাকের সামনে ফেললো এবংসেখান থেকে উড়ে চলে গেল।এই দৃশ্য দেখে সে অত্যন্ত অবাক হয়ে গেল।সে ভাবলো যে, ‘যদি এভাবেই আল্লাহতার সৃষ্টিকেবাঁচিয়ে রাখনে তবে আমার এত কষ্টকরে কাজকরার দরকার কি? আমি আজ থেকে কোনো কাজকরবো না, তিনিই আমাকে খাওয়াবেন’।সে কাজ করা বন্ধই করে দিলো। কিন্তু দুই/তিনদিন পার হয়ে গেলেও সে কোনোখান থেকে কোনোসাহায্য পেল না।
এর কারন জানতে সে একজন জ্ঞানী লোকেরকাছে গেল।তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি দুটি পাখি দেখেছিলে।একটা সেই আহত কাক, আরেকটা সেই ঈগল।তুমি কেন সেই কাকটিই হতে চাইলে??কেন তুমি সেই ঈগলটির মত হতে চাইলে না ??যে নিজের খাবারতো যোগার করেই, সাথে যারানা খেয়ে আছে তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়?
গল্পের এই লোকটির মতই আমাদের চারপাশেঅনেকেই আছেন যারা অন্যের উপর নির্ভরশীলহয়ে বেচে থাকতে চায়।তারা ভুলে যায় যে নিজেকে সাহায্য করে না,আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন না।দুটো কাজের মধ্যে সহজ কাজটি করার জন্যেতারা নিজেরা একটা অজুহাত বানিয়ে ফেলতেভীষন এক্সপার্ট।যখন আমরা নিজেরা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যপ্রয়োজনীয় সব কিছু নিশ্চিত করতে পারবো ঠিকসেই মুহুর্তটি থেকেই নিজেদের ঈগলটির মতভাবতে হবে। অন্যকে বেঁচে থাকার জন্যে সাহায্যকরতে হবে।
উটের ভাগাভাগি
রাজস্থানের একটি গ্রামে এক ব্যক্তির কাছে ১৯ টি উট ছিলো । একদিন সেই ব্যক্তির মৃত্যু হলো । মৃত্যুর পূর্বে তিনি উইল করে গিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর সেই উইলটি পড়া হলো । সেই উইলে লেখা ছিলো —“তার মৃত্যুর পরে তার উনিশটি উটের মধ্যে অর্ধেক তার ছেলেকে, তার একের চতুর্থাংশ তার মেয়েকে, উনিশটি উটের মধ্যে পঞ্চম ভাগ তার চাকরকে দেওয়া হবে ।
আত্মীয়স্বজনরা খুব চিন্তায় পড়ে গেলো যে, এই ভাগ কি করে করা যাবে ?
উনিশটি উটের অর্ধেক অর্থাৎ একটি উটকে দু ভাগ করতে হবে, তাহলে তো উটই মরে যাবে । আচ্ছা, একটা উট না হয় মারাই গেলো, এরপর আঠারোটি উটের এক চতুর্থাংশ —–সাড়ে চার —সাড়ে চার —–তারপর ?
সকলেই খুব চিন্তার মধ্যে ছিলো । তখন সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পাশের গ্রাম থেকে এক বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে ডাকিয়ে আনলেন।
সেই বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজের উটে চড়ে এসেছিলেন । তিনি সব কথা শুনে নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করলেন এবং বললেন, এই উনিশটি উটের সঙ্গে আমার উট মিলিয়ে ভাগ করে দাও ।
সবাই ভাবতে লাগলো — যিনি মারা গেছেন, তিনি এক পাগল যিনি এমন উইল করে চলে গেছেন, এখন এই দ্বিতীয় পাগল এসেছেন, যিনি বলছেন — তার উটটি মিলিয়ে ভাগ করে দিতে। তবুও সবাই চিন্তা করে দেখলো, কোনো উপায় যখন নেই, এনার কথা শুনেই দেখা যাক ।
১৯ + ১ = ২০
২০ র অর্ধেক ১০টি উট ছেলেকে দেওয়া হলো ।
২০ র ১/৪ = ৫টি উট মেয়েকে দেওয়া হলো ।
২০ র ১/৫ — ৪টি উট চাকরকে দেওয়া হলো ।
১০ + ৫ + ৪ = ১৯
যে একটি উট বেঁচে গেলো, সেই উটটি বুদ্ধিমান ব্যক্তির ছিলো ।
সে সেই উটটি নিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে গেলো ।
এইপ্রকারে একটি উট যোগ করাতে ১৯ টি উটের ভাগ সুখ, শান্তি এবং আনন্দের সঙ্গে হয়ে গেলো ।