বৃত্তের সূত্র ও বৈশিষ্ট্য সমূহ
বৃত্তের পরিধি, জ্যা, ব্যাস, ব্যাসার্ধ, চাপ ও ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র সমূহ
- বৃত্ত কাকে বল, বৃত্তের সূত্র
- বৃত্তের পরিধি বা পরিসীমা
- বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র
- বৃত্তের ব্যাস ও ব্যাসার্ধ
- বৃত্তের বৈশিষ্ট্য, জ্যা ও বৃত্তচাপ
Circle |
বৃত্ত |
জ্যামিতি ও পরিমিতিতে বৃত্তের ভূমিকা বা বৃত্তের ক্ষেত্রফলের ভূমিকা অপরিসীম। তাই বৃত্ত বা বৃত্ত ক্ষেত্র জ্যামিতি ও পরিমিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণিত শাস্ত্রে জ্ঞানার্জনের জন্যে তাই বৃত্তের সূত্র সমূহ জানা অত্যাবশ্যক একটি বিষয়। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট বা ভালো ফলাফল করতে বৃত্তের সূত্র ও বৃত্তের বৈশিষ্ট্য সমূহ জানা ও তা প্রয়োগ সম্পর্কিত ধারনার্জন শিক্ষাজীবনের খুবি প্রয়োজনীয় একটি অধ্যায়। আমাদের আজকের আলোচনা বৃত্ত সম্পর্কিত জানা অজানা নানারকম তথ্য।
বৃত্ত কি বা কাকে বলেঃ
ইংরেজী Circle শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ বৃত্ত। Circle শব্দটির একটি সমর্থক শব্দ Ring যা আমরা কানের দুলকে বুঝিয়ে থাকি। সুতারং Circle বা Ring দেখতে গোলাকার। এই গোলাকার বস্তুর মাঝ বরাবর স্থানকে বলাহয় বস্তুটির কেন্দ্র বিন্দু। যাকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে গোলাকার অংশের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে অপর একটি বিন্দু এর চারপাশে ঘুরে আসলে বৃত্তের সৃষ্টি হয় বা তাকে বৃত্ত বলে। বৃত্ত বলতে বৃত্ত ক্ষেত্রের বাইরের চারদিকস্থ রেখা বা বক্ররেখা কে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে রেখা দ্বারা বৃত্ত ক্ষেত্র ঘেরা থাকে সেই রেখাকে বৃত্ত বলে।
বৃত্তের কেন্দ্র বা কেন্দ্রবিন্দুঃ
বৃত্ত ক্ষেত্রের ঠিক মাঝামাঝি বা মাঝের জায়গায় অবস্থিত অংশকে বৃত্তের কেন্দ্র বলে। অন্যদিকে মাঝের অবস্থানে যে বিন্দু থাকে তাকে কেন্দ্রবিন্দু বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে বৃত্তের ঠিক মাঝে যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে বৃত্ত ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়, সেই বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু বা বৃত্তের কেন্দ্র বলে।
কেন্দ্র |
বৃত্তের জ্যা কাকে বলেঃ
বৃত্তের উপরস্থ দুটি বিন্দু যোগ করলে যে সরলরেখা পাওয়া যায় তাকে বৃত্তের জ্যা বলে। বৃত্তে অসংখ্য জ্যা আকা যায়। প্রতিটি জ্যা বৃত্ত কে দুটি অংশে বিভক্ত করে।
জ্যা |
বৃত্তচাপ কি, বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য ও বৃত্তকলার ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রঃ
বৃত্তের প্রতিটি জ্যা বৃত্ত কে যে দুটি অংশে বিভক্ত করে তার প্রতিটি অংশকে বৃত্তচাপ বলে। অন্যভাবে বলা যায় বৃত্তের উপরস্থ দুটি বিন্দু বৃত্তকে যে দুটি অংশে ভাগ করে তার প্রতিটি ভাগ কে বৃত্তচাপ বলে। অন্য দিকে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য বলতে বৃত্তচাপ বৃত্তের যে অংশে উৎপন্ন হয় বৃত্তের উপরস্থ সেটুকু অংশের দৈর্ঘ্য কে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য বলে। বৃত্ত কেন্দ্রে 360º কোণ উৎপন্ন করে তাই বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য হবে, (বৃত্তের পরিধি x বৃত্তচাপের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমাণ বা থিটা ডিগ্রী) ÷ 360⁰ বা, (2Πr x ∅)÷360º বা, 2Πr∅÷360º বা, Πr∅÷180º বা, Πr∅/₁₈₀º। অন্যদিকে বৃত্তকলার ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র হবে, (বৃত্তের ক্ষেত্রফল x বৃত্তচাপের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমাণ বা থিটা ডিগ্রী) ÷ 360⁰ বা, (Πr² x ∅)÷360º বা, Πr²∅/₃₆₀º।
বৃত্তচাপ |
বৃত্তের ব্যাসার্ধ কাকে বলেঃ
আমরা আগেই জেনেছি যে কেন্দ্রে থাকা বিন্দুকে কেন্দ্র করে অপর একটি বিন্দু এর চারি দিকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরে যে আবদ্ধ বক্র রেখা সৃষ্টি করে তাকে বৃত্ত বলে। আর বৃত্তের উপর অবস্থিত যে কোন বিন্দু থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব কে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে। কেন্দ্র থেকে বৃত্তের চারিদিকের দূরত্ব সমান বলে বৃত্তের সকল ব্যাসার্ধ সমান হয়ে থাকে। বৃত্তের ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য কে সাধারন্ত 'r' একক ধরা হয়ে থাকে।
ব্যাসার্ধ |
বৃত্তের ব্যাস কি ও ব্যাস নির্ণয়ের সূত্রঃ
বৃত্তের উপরস্থ দুটি বিন্দু এবং বৃত্তের কেন্দ্র যদি একি সরলরেখায় অবস্থান করে তবে সেই সরল রেখাকে বৃত্তের ব্যাস বলে। বৃত্তের উপরস্থ দুটি বিন্দুর সংযোগ সরলরেখা কে জ্যা বলে আর কোন জ্যা কেন্দ্রগামী হলে বা কেন্দ্র দিয়ে গেলে তাকে বৃত্তের ব্যাস বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বৃত্তের কেন্দ্রগামী জ্যা কেই বৃত্তের ব্যাস বলে। বৃত্তে তাই সকল জ্যা কে ব্যাস বলা না গেলেও সকল ব্যাস-ই এক একটি জ্যা। বৃত্তের উপরস্থ দুটি বিন্দু ও কেন্দ্র এক সরলরেখায় অবস্থান করে ব্যাস উৎপন্ন হয়। প্রতিটি ব্যাস দুটি ভাগে বিভক্ত হয় কেন্দ্র বিন্দু দ্বারা। প্রতিটি ভাগ কে এক একটি ব্যাসার্ধ বলা যায়। যেহেতু ব্যাসার্ধকে 'r' ধরা হয় সুতারং, ব্যাস দূটি 'r' এর যোগফল। অর্থাৎ ব্যাস নির্ণয়ের সূত্র r+r বা 2r একক। অন্যভাবে বলা যায় ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য r একক বলে ব্যাসের দৈর্ঘ্য 2r একক।
ব্যাস |
বৃত্তের পরিধি বা পরিসীমা কাকে বলে ও পরিধি নির্ণয়ের সূত্রঃ
বৃত্ত কেই মূলত বৃত্তের পরিধি বলে। বৃত্তের পরিধি কে বৃত্তের পরিসীমা ও বলা যায়। অর্থাৎ যে গোলাকার রেখা দ্বারা বৃত্ত ক্ষেত্র ঘেরা থাকে সেই গোলাকার বক্র রেখা কে বৃত্ত বলে আবার একে পরিধি বা পরিসীমা ও বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে বৃত্ত তাই-ই পরিধি বা পরিসীমা। বৃত্তের পরিধি বা পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র হলো 2Πr একক। অর্থাৎ বৃত্তের পরিসীমা বা পরিধি = বৃত্তের ব্যাস এর দৈর্ঘ্য x Π(পাই চিহ্ন বা 3.1416)।
পরিধি |
বৃত্ত ক্ষেত্র কি ও বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রঃ
কোনো বৃত্ত যতটুকু জায়গা দখল করে সেই জায়গা বা ক্ষেত্রকে বৃত্ত ক্ষেত্র বলে। অর্থাৎ বৃত্ত যে পরিমাণ জায়গা জুড়ে থাকে তার সম্পূর্ণ অংশকে বৃত্ত ক্ষেত্র বলে। বৃত্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র হলো, Πr² বা পাই গুন r এর বর্গ। অন্যভাবে বলা যায় বৃত্তের ব্যাসার্ধের বর্গ কে Π দিয়ে গুন করলে যে গুনফল পাওয়া যায় তাকে বৃত্তের ক্ষেত্রফল বলে। অর্থাৎ বৃত্তের ক্ষেত্রফল Πr² বর্গ একক।
বৃত্ত ক্ষেত্র |
অর্ধবৃত্ত কাকে বলে, অর্ধবৃত্তের পরিধি ও ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রঃ
অর্ধ বৃত্ত বলতে কোন বৃত্তের অর্ধাংশ বা অর্ধেক কে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ বৃত্তের দুই ভাগের এক ভাগ কে অর্ধ বৃত্ত বলে। বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র যেহেতু 2Πr একক সেহেতু অর্ধ পরিধি নির্ণয়ের সূত্র বা অর্ধ পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র 2Πr÷2 বা 2Πr/₂ বা Πr একক। অন্য দিকে বৃত্তের ক্ষেত্রফল যেহেতু Πr² বর্গ একক সুতারং অর্ধবৃত্তের ক্ষেত্রফল হবে Πr²÷2 বা Πr²/₂ বর্গ একক।
অর্ধবৃত্ত |
বৃত্তের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
- ১. বৃত্তের সকল ব্যাসার্ধ সমান।
- ২. বৃত্তের সকল ব্যাস সমান।
- ৩. বৃত্তের ব্যাস কে বৃত্তের জ্যা বলা যায়।
- ৪. অর্ধবৃত্তস্থ কোণ এক সমকোণ হয়।
- ৫. বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক।
- ৬. বৃত্তের ব্যাসার্ধ ও ব্যাসের অনুপাত 1:2 হয়।
- ৭. বৃত্তের পরিধি ও ক্ষেত্রফলের অনুপাত 2:r হয়।
- ৮. বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত Π:1 হয়।
- ৯. বৃত্তের পরিধি, ব্যাসের Π গুণ বা 3.1416 গুণ হয়।
- ১০. বৃত্তের ব্যাস, ব্যাসার্ধের 2 গুণ হয়।
- ১১. বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমান 360⁰।
- ১২. প্রতিটি জ্যা বৃত্তকে দুটি চাপে বিভক্ত করে।
- ১৩. প্রতিটি ব্যাস বৃত্তকে দুটি চাপে বিভক্ত করে।
- ১৪. বৃত্তের অভ্যান্তরে অবস্থিত যে কোনো বর্গের একটি কর্ণের দৈর্ঘ্য হয় বৃত্তের ব্যাসের সমান।
- ১৫. বৃত্তের কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন কোনো জ্যা এর উপর অংকিত লম্ব ঐ জ্যাকে সমদ্বিখন্ডিত করে।
- ১৬. বৃত্তকে একবার ঘোরালে এর পরিধির বা পরিসীমার সমান দূরত্ব অতিক্রম করে।
- ১৭. বৃত্তে অবস্থিত যে কোনো চতুর্ভুজের দুটি বিপরীত কোণের সমষ্টি বা যোগফল দুই সমকোণ বা 180⁰ হয়।
- ১৮. বৃত্তের ব্যাসি বৃত্তের বৃহত্তম বা সবচেয়ে বড় জ্যা।
- ১৯. বৃত্ত বলতে বৃত্তের পরিধিকে বোঝায়।
- ২০. যে কোনো দুটি ব্যাসার্ধের মোট দৈর্ঘ্য, বৃত্তের যে কোনো একটি ব্যাসের দৈর্ঘ্য এর সমান হয়।
তাহলে আজ এপর্যন্তই। আশাকরি সকলে বৃত্ত সম্পর্কিত সকল সূত্র ঝুঝতে পেরেছি। এর পর বৃত্ত সম্পর্কিত সকল গাণিতিক ও জ্যামিতিক সমস্যা নিশ্চিৎ খুব সহজে সকলে সমাধান করতে পারবো। বুঝতে সমস্যা হলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না, কেমন?
thanks all
ReplyDelete